ফিতরা কিভাবে আদায় করবেন || ফিতরা আদায়ের সঠিক পদ্ধতি || টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় হবে কি?

 

ফিতরা কিভাবে আদায় করবেন || ফিতরা আদায়ের সঠিক পদ্ধতি || টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় হবে কি?
 ফিতরা কিভাবে আদায় করবেন || ফিতরা আদায়ের সঠিক পদ্ধতি || টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় হবে কি?


ফিতরা প্রদানের পরিমাপ সংক্রান্ত আলোচনায় সা বহুল আলোচিত শব্দ। সা হচ্ছে আরবদেশে ওজন বা পরিমাপে ব্যবহৃত পাত্র। বাংলাদেশে যেমন ধান পরিমাপের জন্য একসময় কাঠা ব্যবহৃত হত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগের ছা‘ হিসাবে এক ছা‘-তে সবচেয়ে ভাল গম ২ কেজি ৪০ গ্রাম হয়। বিভিন্ন ফসলের ছা‘ ওযন হিসাবে বিভিন্ন হয়। এক ছা‘ চাউল প্রায় ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হয়। তবে ওযন হিসাবে এক ছা‘ গম, যব, ভুট্টা, খেজুর ইত্যাদি ২ কেজি ২২৫ গ্রামের বেশী হয়। ইরাকী এক ছা‘ হিসাবে ২ কেজি ৪০০ গ্রাম অথবা প্রমাণ সাইজ হাতের পূর্ণ চার অঞ্জলী চাউল। বর্তমানে আমাদের দেশে এক ছা‘তে আড়াই কেজি চাউল হয়।[১৮]

এখানে প্রমাণ সাইজ হাত বলতে, একজন মাঝামাঝি শারীরিক গঠনের মানুষ অর্থাৎ অধিক লম্বা নয় এবং বেঁটেও নয়, এই রকম মানুষ তার দুই হাত একত্রে করলে যে অঞ্জলি গঠিত হয়, ঐরকম পূর্ণ চার অঞ্জলি সমান হচ্ছে এক সা।[১৯][২০] সাদাকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব হয়, কাদের পক্ষ থেকে আদায় করতে হয়-এইসব বিবরণ হাদীস ও ফিকহের কিতাবে বিস্তারিতভাবে আছে।

এই সাদাকার পরিমাণ সম্পর্কে হাদীস ও সুন্নাহয় দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে : তা হচ্ছে, صاع (‘সা’) ও نصف صاع (নিসফে সা’)।


আধুনিক হিসাবে সা ও নিসফে সা

১ সা = ২৮০.৫০ তোলা

১ তোলা = ১১.৬৬ গ্রাম (প্রায়)

অতএব ১ সা = ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়) অর্থাৎ ৩ কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এবং আধা সা = ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়) অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি। 

 ফিতরা কিভাবে আদায় করবেন || ফিতরা আদায়ের সঠিক পদ্ধতি || টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় হবে কি?

যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা আদায় করলে এক ‘সা’ এবং গম দ্বারা আদায় করলে ‘নিসফে সা’ প্রযোজ্য হবে।

১-যদি গম, কিসমিস, পনীর ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করে, তাহলে হয়ে যাবে। তার দলীল বুখারী থেকে-

صحيح البخاري (2/ 130) 1503 – حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَهْضَمٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ نَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى العَبْدِ وَالحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالكَبِيرِ مِنَ المُسْلِمِينَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ» __________ [تعليق مصطفى البغا] (فرض) أوجب أو قدر.

❐ অর্থ : হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম زَكَاةَ الفِطْرِ সাদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা আবশ্যক করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। বুখারী-২/১৩১, হাদীস-১৫০৬।


উত্তর : ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক সকল মুসলিমের উপর ছাদাকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক ছা‘ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/১৫০৩, ১৫০৪, ১৫০৬, ১৫০৭, ১৫০৮, ১৫১০, ১৫১১, ১৫১২; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪-৯৮৬)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, এক ছা পরিমাণ খাদ্য দ্রব্য প্রদান করা ফরয। অর্ধ ছা‘ পরিমাণ ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে ছহীহ সূত্রে কোন তথ্য প্রমাণিত হয়নি’ (আল-মাজমূঊ, ৬/১৪৩ পৃ.)।

আর সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বক্তব্য হল, এক ছা‘ সমান প্রায় তিন কেজি। যেমন, সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর  হিসাবে প্রায় তিন কেজি চাল অথবা দেশের অন্যান্য প্রধান খাদ্য দ্রব্য হতে আদায় করতে হবে’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৮/২৬৬ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ছা‘ অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের পক্ষ থেকে এক ছা‘ পরিমাণ ফিতরা আদায় করা অপরিহার্য। আর তা হল, মধ্যম মানের হস্তদ্বয়ের পূর্ণাঙ্গ চার মুষ্টি, যা অভিধানে বর্ণিত হয়েছে। ওজনের হিসাবে যার পরিমাণ প্রায় তিন কেজি’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি বায, ১৪/২০১ পৃ.)।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইবনু রুশদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আলিমদের ঐকমত্যানুসারে নির্ধারিত এক ছা‘ থেকে কম ফিতরা দেয়া জায়েয নয়। কেননা এক ছা‘ থেকে কম দিলে ফিতরা আদায় হবে না (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, ২৫/৭০; আল-ইজমা‘আ, পৃ. ৪৮; বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ১/২৮১ পৃ.)। মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বালী মাযহাবের আলিমগণের মতানুযায়ী ফিতরায় এক ছা‘ পরিমাণ খাদ্য দ্রব্য প্রদান করা ফরয (আল-কাফী ফী ফিক্বহি আহলিল মাদীনাহ, ১/৩২৩ পৃ.; শারহু মুখতাছার খালীল, ২/২২৮; রাওযাতুত্ব ত্বালিবীন, ২/৩০১ পৃ.; আল-হাবী, ৩/৩৭৯ পৃ.; কাশ্শাফুল ক্বিনা‘, ২/২৫৩; আল-মুগনী, ৩/৮১; আল-মাজমূঊ, ৬/১৪২ পৃ.)।

তবে শাইখ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)  বলেন, মসুরের ডালের মত দানা বিশিষ্ট গম ওজন করে দেখা যায় যে, তা এক ছা‘ সমান ২ কেজি ৪০ গ্রামের মত হচ্ছে’ (আশ-শারহুল মুমতি‘, ৬/১৭৬ পৃ.; মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি উছাইমীন, ২০/১১২ পৃ.)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত অধিকটাকে ধরাটাই উত্তম হবে। কেননা বেশির মধ্যে কমটাও শামিল থাকে (আল-মুগনী, ৪/১৬৮; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৯৭৯৩)।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url